Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
সফলতার গল্প -১
ছবি
ডাউনলোড

জেলে জালাল এখন মুদি ব্যবসায়ী


শারীরিক প্রতিবন্ধী জালালের সবচেয়ে আকর্ষণীয় গুণ হলো – তার মুখে সবসময় হাসি লেগে থাকে। প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেওয়ার পর তার বেড়ে উঠার পরিবেশ ছিলো প্রতি মুহুর্তেই চ্যালেঞ্জের। হাওরের এলাকায় প্রতিবন্ধী বা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য এখনো গ্রহণযোগ্য পরিবেশ তৈরি হয় নি। তবে এটা সত্য – গত একদশকের চিত্র দ্রুতগতিতে পাল্টাচ্ছে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে কোন প্রতিবন্ধীই এখন অবহেলার পাত্র নয়। অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন জালালকে কৈশোর থেকে যৌবনে প্রবেশের পরই পরিবারের দায়িত্ব নিতে হয়েছে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন দায়িত্বটা যখন ঘাড়ে চেপে বসেছিলো, তখন অবহেলা আর বঞ্চনার নিকৃষ্টতম মুহুর্তগুলো বারবার আবর্তিত হয়েছে দিনের পর দিন। কিন্তু জালালের হাসিমুখ কখনোই হেরে যেতে দেয়নি। সামান্য পৈত্রিক সম্পত্তি পুঁজি করে ভাতের ব্যবস্থাটা হয়ে গেলেও বাস্তবিক মৌলিক খরচাপাতির ব্যয় মেটানোর জন্য জালালকে হাঁটতে হয়েছে বহু পথ।


বছরের অধিকাংশ সময় উপজেলার হাওরগুলো জীবন্ত থাকে। তাহিরপুর উপজেলায় যে ২৩টি হাওর আছে, তার প্রায় সবক’টিতেই জালালের গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। হাওরে জেলেদের আনাগোনা দিন-রাত সরব। পরিবেশগতভাবেই জালাল জেলেদের সাথে মিশে গিয়ে নিজেকে একজন সক্ষম ব্যক্তির ন্যায় বারবার প্রমাণ করতে হয়েছে। এমনও হয়েছে দিনের পর দিন হাওরে কেটে গেছে মাছ ধরতে গিয়ে। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা কখনোই জালালের মানসিক অবস্থাকে টলাতে পারেনি। অন্য একজন স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে তাকে আরো বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে। জেলেদের দলে তার সততা’র কথা আর পরিশ্রমী মনোভাবের কথা যখন প্রতিষ্ঠিত, তখনই জালাল জেলেদের জাল থেকে বেরোনোর পরিকল্পনা করে নেয়।


উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের সমাজকর্মীর মাধ্যমে বর্তমান সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুসারে প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনের কথা, সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের কথা জানার পর আগ্রহী হয় – নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে দাঁড় করাবে। সে যে নিজের কাছে কখনোই হেরে যাবে না – এটাই তাকে চ্যালেঞ্জ নিতে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে। ২০০৮ সালে সমাজসেবা অফিসারের সাথে তার স্বপ্নের কথা যখন ব্যক্ত করে, সমাজসেবা অফিস তখন জালালের ইচ্ছে অনুযায়ী ১০,০০০ টাকা সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে – স্কীমের নাম মুদি দোকানী। ক্ষুদ্রঋণের টাকায় মুদি দোকানে পণ্য উঠাতে পারলেও দোকান তৈরির ব্যবস্থাটা বাধা হয়ে দাঁড়ায়। সমাজসেবা কার্যালয় ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় তার জন্য উপজেলা শহীদ মিনারের পাশেই একটা দোকানের ব্যবস্থা করা হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় অনেক কিছুই তার দোকানে বিক্রয় হয়। তার দোকানের বিক্রয় বৃদ্ধির অন্যতম কারণ – জালালের সহাস্যমুখ।


জেলে থেকে মুদি দোকানী হয়ে এখন জালালের সংসার হয়েছে। জালালের একটা রাজকন্যা হয়েছে কয়েকমাস আগে। ২০২০ সালে জালাল আবারও সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নিয়েছে। এবার নিয়েছে ১৫,০০০ টাকা। জালালকে কখনোই ঋণের কিস্তির জন্য তাগিদ দিতে হয় না। সে কষ্ট করে হেঁটে অফিসে এসে কিস্তির টাকা দিয়ে যায়। সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের টাকা নিয়ে ব্যবসায়ী বনে যাওয়া জালালকে প্রশ্ন করেছিলাম – জেলে’র জীবনটা মিস করেন না? জালালের সহাস্য উত্তর – না, স্যার। মিস করি না। ওই জীবনটায় অনিশ্চয়তা ছিলো, আর এখন আমি স্বাধীন ব্যবসায়ী। এখন আমার সম্মান অনেক। আমাকে কেউ এখন বন্ধু ভাবতে সংকোচবোধ করে না, অথচ এমন সময় গেছে আমার সাথে আড্ডা দেওয়ার মতোও কেউ ছিলো না। এখন আমি ব্যবসায়ী। তাহিরপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতি’র একজন সদস্য আমি। আমার এখন দাম আছে।


বঙ্গবন্ধু এই ঋণ প্রবর্তন করেছিলেন জানার পর জালালের উচ্ছ্বাস আরো বেড়ে গিয়েছে। সে একবাক্যে স্বীকার করে নিলো – বঙ্গবন্ধুকন্যা না থাকলে আমাদের কথা আর কে ভাবতো! আমাদের জন্য প্রধানমন্ত্রী আরো ১০০ বছর বেঁচে থাকুক। জালালের বুকে ‘মুজিব শতবর্ষ’ লেখা পিন ঝুলছে।