Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
সফলতার গল্প - ২
ছবি
ডাউনলোড

সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ পুণর্জন্ম দিয়েছে দীবা দাসকে


তখনকার সময়ের সূর্য্যের গাঁও গ্রামটি ছিলো বিদ্যুৎহীন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন পাড়াগাঁ। দীবা দাসের সংসার ওই পাড়াগাঁতেই। অভাবের চূড়ান্তরূপ দেখে দেখে দিশেহারা হয়ে যাওয়া দীবা দাস একসময় অর্থনৈতিক মুক্তির পথ খুঁজতে থাকেন। মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গৃহপরিচারিকার কাজ করা শুরু করেন। স্বামী বিরেন্দ্র কুমার দাসের স্বল্প আয়ের সংসারে একে একে ৩ টি সন্তানের আগমন।


উপজেলা সমাজসেবা অফিসারের নেতৃত্বে গ্রাম পরিদর্শন হয় ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সূর্য্যের গাঁও গ্রামে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয় গ্রাম নির্বাচন, গ্রাম জরিপের মাধ্যমে। সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের আলোয় আলোকিত হওয়ার জন্য গ্রামের প্রায় প্রতিটি পরিবার জরিপের আওতায় চলে আসে। জরিপে দীবা দাসের আগ্রহ আর ইচ্ছাশক্তির বহিঃপ্রকাশ ছিলো উল্লেখযোগ্য ঘটনা। পরবর্তীতে ২০ জনের দল নিয়ে প্রকল্প গ্রাম তৈরি হয়ে যায়। আর শুরু হয়ে যায় ভাগ্য বদলের সংগ্রামে একাকী সেনানী হয়ে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার।


দীবা দাস হাঁস-মুরগী পালন স্কীমে ৫০০০ টাকা সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নেন ২০০৪ সালে। দীবা দাসের ভাষায় – “আমার হাঁস মুরগী পালনের ভাগ্য। এই হাঁস মুরগীর ব্যবসা করে আমি ভাগ্য বদলে ফেলেছি, স্যার। আমার দুটো মেয়েকে পড়াচ্ছি, একমাত্র ছেলেটাও ইন্টারমিডিয়েটে পড়ছে। এই সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের জন্য সমাজসেবা অফিসের সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।


দীবা দাস হাঁস মুরগীর ব্যবসা দিয়ে জীবনের গল্প বদলে ফেলার কাজ শুরু করলেও সেটার পথ এতোটুকু সহজ ছিলো না। হাঁস-মুরগী থেকে ডিম বিক্রয়, হাঁস মুরগীর সংখ্যা বৃদ্ধি হলে তা বিক্রি করে সঞ্চয় বৃদ্ধি করে করে ছাগল ও গরু পালন শুরু করেন। দীবা দাসের স্বপ্নপূরণের পথের যোগ্য সঙ্গী ছিলেন স্বামী বিরেন্দ্র কুমার দাস। অস্থায়ী ভিত্তিতে বিআরডিবি অফিসে অফিস সহকারীর কাজ করে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করে গেছেন। দীবা দাস সেলাই কাজ শিখেছেন নিজের চেষ্টায় এবং সমাজসেবা অফিসের কারিগরি প্রশিক্ষকের সহায়তায়।


দীবা দাস যখন সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নেন তখন তিনি ‘ক’ শ্রেণীতে (দরিদ্রতম) ছিলেন। ২০০৮ সালে উনি পুনরায় সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নেন সমাজসেবা কার্যালয় থেকে, তখন তিনি ‘খ’ শ্রেণীতে উন্নিত হয়েছেন। বড় মেয়েকে এখন ডিগ্রীতে পড়াচ্ছেন, ছোট মেয়েকে অনার্সে পড়াচ্ছেন সিলেট এমসি কলেজে।


সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের ফসল হলো দীবা দাসের মেয়ে দুজনই এখন স্বাবলম্বী হওয়ার পথে। বড় মেয়ে লিজা দাস কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে এখন বিভিন্ন জায়গায় খন্ডকালীন কাজ করছে। ছোট মেয়েটা অনার্সে পড়ছে – পাশাপাশি সেলাই কাজ শিখছে। এখন আর দারিদ্রতার অন্ধকার নির্ঘুম রাত উপহার দেয় না দীবা দাসকে।


পল্লী মাতৃকেন্দ্র থেকে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার পর দীবা দাস তার মতো অসহায় নারীদের একজন প্রশিক্ষক হিসেবে, সহযোগী হিসেবে সর্বদা পাশে আছেন। প্রায় ১৫-২০ জন নারীকে দারিদ্র্যের খাদের কিনারা থেকে তুলে এনে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচার পথ দেখিয়েছেন। শীতের সময়টায় অনেক নারীই পিঠার ব্যবসা দিয়েছেন, ডিম সেদ্ধ করে রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিক্রি করছেন।


সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের প্রবর্তক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন নারীরা সংগঠিত হবে, দারিদ্রবিমোচন হবে, পরিকল্পিত পরিবার গঠনের মাধ্যমে নারীরা মাথা উঁচু করে সচেতনতার মাধ্যমে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। সূর্য্যের গাঁও গ্রামের নারীরাও এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সফল উদ্যোক্তা।


পল্লী মাতৃকেন্দ্রকে সুসংগঠিত করতে দীবা দাস পরবর্তীতে গ্রামের প্রতিটি পরিবারের নারীদেরকে নিয়ে নিয়মিত উঠোন বৈঠক করেই চলেছেন। পল্লী মাতৃকেন্দ্রের ধারণাকে ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে দীবা দাস একজন দুরন্ত সৈনিক।