দারিদ্র্যের খেলায় জয়ী হতে খেলনের সঙ্গী সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ
ভাটি তাহিরপুরের মানুষগুলোর অর্থনৈতিক অবস্থার কাঠামো নির্ভর করে এক ফসলি জমি আর বছরের অধিকাংশ সময়ের হাওরের মাছ ধরার উপর। কিন্তু খেলন মিয়ার সফলতার গল্পে ফসলি জমির কথোপকথন নেই, নেই হাওর থেকে আয়ের ব্যাপক আলোচনা। খেলন মিয়ার জীবনধারণের একমাত্র মাধ্যম ছিলো দিনমজুরি। কখনো বালিজুরী আবার কখনো বাদাঘাট ইউনিয়নে গিয়ে দিনমজুর হিসেবে খাটতেন, বিনিময়ে যা পেতেন তা দিয়েই সংসারের চাকা ঘুরাতেন।
এভাবে আর কত দিন! - এই প্রশ্ন কখনো খেলনের মনে উঁকি দেয় নি, যতদিন তিনি দারিদ্যের ফাঁদে পড়েন নি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে যখন অসুস্থ হলেন, তখন অসহায়ত্বের চূড়ান্ত রূপ দেখলেন। মানুষের কাছে সুদে ধার করে পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলো মিটিয়েছেন। বেসরকারি কিছু সংস্থাও খেলন মিয়ার সাথে যোগাযোগ করে ক্ষুদ্রঋণ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। আর ঠিক তখনই সমাজসেবা কার্যালয়ের ইউনিয়ন সমাজকর্মী, কারিগরি প্রশিক্ষকদের সাথে ভাটি তাহিরপুরের লোকজনের সাক্ষাৎ হয়।
সাধারণ লোক বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের কথা ভাটি তাহিরপুরের লোকজন তেমন জানতোই না। যখন তারা জানতে পারলো সমাজসেবা কার্যালয় বিনা সুদে সহজ শর্তে ক্ষুদ্রঋণ দেয়, তখন খেলন মিয়া ও তার দল ক্ষুদ্রঋণ নেয়। গ্রাম নির্বাচন ও জরিপ শেষে খেলন মিয়া ভাটি তাহিরপুর সমাজসেবা সুদমুক্ত প্রকল্প গ্রামের একজন সদস্য হোন। দিনমজুর খেলন মিয়া ২০,০০০ টাকা ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে প্রথম দু’মাসেই একটা ব্যবসার ভিত্তি দাঁড় করিয়ে ফেলেন। মানুষের কাছ থেকে ধারে বা সুদে নেওয়া টাকা ফেরত দিতে গিয়ে খেলন মিয়ার বেশ বেগ পেতে হয়েছে। তবে সে দুঃসময় কাটাতে বেশি সময় নেন নি এক সময়কার লড়াকু খেলন।
খেলন মিয়া সমাজসেবার সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের বিষয়ে মন্তব্য করেছেন এভাবে – ‘একসময় না খেয়ে থাকতে হয়েছে, উপার্জন করার পরেও। কারণ সুদের টাকার জন্য মানুষ খুব সকালেই ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে থাকতো। কিন্তু একটা স্থায়ী উপার্জনের রাস্তা দেখিয়েছে সমাজসেবা অফিস। আমি এখন একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, একসময় ছিলাম দিনমজুর।‘
সমাজসেবার প্রতি আজীবন কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খেলন মিয়া বলেন – ‘২০১৬ সালের পর জীবনটা বদলে যায় বিনা সুদের ঋণের জন্যই। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে সবাই হাই স্কুলে পড়ে। আমার স্ত্রীকেও অন্যের বাড়িতে কাজ করতে হয় না। আমি নিজের স্বাধীনমতো নিজের দোকান চালাই। মাস শেষে সমাজসেবার কিস্তি দিয়েও আমার এখন সঞ্চয় থাকে।‘
বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ জাগরণী সপ্তাহ উপলক্ষে খেলন মিয়ার অভিব্যক্তির প্রকাশ হলো এরকম – স্যার, আমি শুধু একাই দাঁড়াইছি তা কিন্তু না। আমি ২০-৩০ জন কুলহারা শ্রমিককে পথ দেখাইছি। তারা এখন আর কেউ ভিক্ষা করে না, হাত পাতে না কোথাও। তারা এখন কেউ ডিম ব্যবসায়ী, সবজি ব্যবসায়ী, মুরগী ব্যবসায়ী।‘
খেলনের মতে সবচেয়ে লাভজনক সময় বর্ষাকাল। দোকানের সামনে তখন প্রচুর দেশি বা ব্রয়লার মুরগি খাঁচায় রাখে। আর ওই ৭/৮ মাস যে লাভ হয় তাতেই খেলন মিয়া সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের কিস্তির টাকা জোগাড় হয়ে যায়। খেলন মিয়া পান চিবুতে চিবুতে বলেন – স্যার, এই দোকানটা পাকা করছি। ছেলে-মেয়েরা ইশকুলে পড়তাছে। আফনেরার প্রতি আমি আজীবন কৃতজ্ঞ। সুদের জ্বালায় তো একবার মইরা যাইতে চাইছিলাম, অথচ আল্লাহ একসময় আফনেরারে উছিল্লা হিসেবে পাঠাইছে।
সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ বঙ্গবন্ধুর ধারণা। এর মাধ্যমে তাহিরপুর উপজেলায় প্রতিবছরই এমন সফল, আত্মতৃপ্ত খেলন মিয়ার পুনর্জন্ম হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় প্রতিটি গ্রাম হবে প্রতিটি শহরকে বাস্তবায়ন করতে হলে সুদমুক্ত ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে দারিদ্রকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করে সোনার বাংলা গঠনে সরকারের একটি সক্রিয় বিভাগ হিসেবে সমাজসেবা কার্যালয় সদা প্রস্তুত।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস